সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
সময়মতো ৫৪০ আইসিইউ বসানো নিয়ে শঙ্কা

সময়মতো ৫৪০ আইসিইউ বসানো নিয়ে শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রায় পৌনে ২ বছর আগে দেশের ৫৫ সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যকেন্দ্র) স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের ২০ মাস পরেও ১৫ জেলায় আইসিইউ স্থাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রকল্প সংশোধন করা না হলে এসব জেলায় আইসিইউ স্থাপন করা সম্ভব হবে না। আর একটি জেলায় আইসিইউ বসানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে নতুন ভবন নির্মাণ হওয়া পর্যন্ত। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে সব হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫৫ হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে দেশের ৪৩ জেলা সদর হাসপাতাল, দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ৫৪০টি নতুন আইসিইউ শয্যা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর মধ্যে ৪৩টি জেলা হাসপাতালে ১০টি করে ৪৩০টি, ১০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি করে ১০০টি এবং ২টি বিশেষায়িত হাসপাতালে ৫টি করে ১০টি শয্যা স্থাপন করার কথা। তবে এই কাজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের অসামঞ্জস্য ও সমন্বহীনতার তথ্য পেয়েছে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে প্রাধনমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

জানা গেছে, তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ১৩টি জেলা সদর হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে সরকারি অর্থায়নে। অন্যদিকে ৪৩ জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম বিশ্বব্যাংকের টাকায় সম্পন্ন হওয়ার কথা।

প্রকল্প বাস্তবায়নে মোটামুটি ৭ ধরনের অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং জেলা সিভিল সার্জন/তত্ত্বাবধায়কের অফিসের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন কিছু হাসপাতালে যথাযথ পরিদর্শন না করে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু করা সম্ভব না হওয়ায় সেটি সংশোধন করে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবল (প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট) নিয়োগের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলেও খাতভিত্তিক (অবকাঠামো উন্নয়ন, অক্সিজেন সরবরাহ, জনবল নিয়োগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়) দৃশ্যমান বাস্তবায়ন নেই। দেশে করোনা পরিস্থিতির তুলনামূলক উন্নতি হওয়ায় জেলা পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দৃশ্যমান। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭ জেলায় ‘রিভাইজ অপারেশনাল প্লান’ (আরওপি) এখনো সম্পাদন হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হাসপাতালগুলোর ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের তুলনায় সরকারি অর্থায়নে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম গতিশীল।

এসব অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা নিরসনে গত ২৫ অক্টোবর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সভা হয়। সামগ্রিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে সভায় বলা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩টি জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের ভৌত অবকাঠামো সমাপ্ত করা সম্ভব। ১৪টি জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের কাজ ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ১৫টি জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ওপি সংশোধন করে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেগুলা হলো- আইসিইউ স্থাপন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য ৬ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হবে; অক্সিজেন জেনারেটর সংক্রান্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করতে হবে; আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রয়োজানীয় জনবল নিয়োগ/প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে; আলোচ্যসূচির ফোকাল পারসন মনোনীত করা হবে পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ); অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধাদি বিবেচনায় উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে।

এ বিষয়ে ইআরপিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহা গোলাম নবী আমাদের সময়কে বলেন, তিনি গত ১ ডিসেম্বর এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর ২ দিনের সরকারি ছুটি। তিনি এখনো এ ধরনের কোনো ফাইল বা নির্দেশনা পাননি। ফলে বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

ভূতপূর্ব প্রকল্প পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সভায় প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, নেত্রকোনার বর্তমান ভবনের পরিবর্তে নির্মিতব্য নতুন ভবনের নবম তলায় আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হবে। অন্য ১৫টি জেলায় ওপি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু করা যাবে না। ফলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যে ৫৫ হাসপাতালে বসবে আইসিইউ

বিশেষায়িত ২ হাসপাতালের মধ্যে আছে ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ’ ও চট্টগ্রামের ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ’। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

জেলা সদর হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মাদারীপুর জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল, ফেনী জেলা হাসপাতাল, নোয়াখালী জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেলা হাসপাতাল, কুমল্লিা জেলা হাসপাতাল, যশোর জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল, লালমনিরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল, নরসিংদী জেলা হাসপাতাল, রাজবাড়ী জেলা হাসপাতাল, শরীয়তপুর জেলা হাসপাতাল, জয়পুরহাট জেলা হাসপাতাল, নাটোর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, দিনাজপুর জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, পঞ্চগড় জেলা হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও জেলা হাসপাতাল, বান্দারবারন জেলা হাসপাতাল, খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতাল, লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি জেলা হাসপাতাল, মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতাল, সিলেট জেলা হাসপাতাল, খুলনা জেলা হাসপাতাল, ঝিনাইদহ জেলা হাসপাতাল, কুষ্টিয়া জেলা হাসপাতাল, মাগুরা জেলা হাসপাতাল, মেহেরপুর জেলা হাসপাতাল, নড়াইল জেলা হাসপাতাল, নেত্রকোনা জেলা হাসপাতাল, ঝালকাঠি জেলা হাসপাতাল, পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877